পার্থ ব্যানার্জী ও সিদ্ধার্থ পাকিড়া ( জামালপুর ) : অবৈধ বালি খাদান ও ওভারলোড বালির লরি চলাচল বন্ধ করলো গ্রামবাসীরা। ঘটনাটি পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জ্যোতশ্রীরাম পঞ্চায়েতের কোড়া গ্রামের। অবৈধ বালি খাদান বন্ধ হবার সাথে সাথে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ওভারলোড বালির লরি চলাচল বন্ধ হওয়ায় আপাতত স্বস্তিতে কোড়া গ্রামের বাসিন্দারা ।
গ্রামবাসী সৌমিত্র ঘোষ বলেন , তাঁদের এলাকার মানুষজনের যাতায়াতের প্রধান রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল হয়ে পড়েছিল । তারজন্য এলাকার মানুষজনকে কম ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়নি । বহু আবেদন নিবেদনের পর শেষমেষ পঞ্চায়েত ওই রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয় । কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে মাস ৬-৭ আগে পঞ্চায়েত থেকে কোড়া গ্রামের দেড় কিমি রাস্তাটি পাকা পিচ রাস্তা করেদেওয়া হয় ।একই সঙ্গে রাস্তার পাশে করে দেওয়া হয় পাকা ড্রেন । সৌমিত্র ঘোষ সহ গ্রামের অপর একাধীক বাসিন্দা অভিযোগে বলেন ,রাস্তা ভালো হয়ে যাবার পর মাস ৫-৬ আগে কিছু অসাধু ব্যক্তি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মুণ্ডেশ্বরী নদীতে অবৈধ খাদান চালু করে বসে । সেই খাদান থেকে প্রতিদিন শয়ে শয়ে লরি ও ডাম্পারে বালি লোড করে গ্রামের রাস্তা অন্যত্র পাচার করে দেওয়া শুরু হয়। আর নিত্যদিন ওভারলোড বালির লরি ও ডাম্পার চলাচলের কারণে কয়েক মাসের মধ্যেই দেড় কিমি পিচ রাস্তা ফের বেহাল হয়ে গিয়েছে।অনেক জায়গায় রাস্তার পাশের ড্রেনও বালির লরি ভেঙে দিয়ে চলে গেছে ।প্রতিনিয়ত বালির লরি চলাচলের কারণে ওই রাস্তা দিয়ে গ্রামের মানুষজনের যাতায়াত দুরহ হয়ে পড়ায় গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের পারদ চড়তে শুরু করে ।যার বহিপ্রকাশ ঘটে শুক্রবার দুপুরে । ক্ষোভের অাঁচ শনিবারও অব্যাহত থাকে কোড়া গ্রামে ।
অবৈধ বালিখাদান থেকে বালি লোড করে গ্রামের রাস্তা দিয়ে বালির যাতায়াত শুরু হতেই একযোগে পথে নামে গ্রামবাসীরা । তারা ওভারলোড বালির লরি আটকে বিক্ষোভ দোখানো শুরু করতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।খবর পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে ।সৌমিত্র ঘোষ জানান ,গ্রামের রাস্তাদিয়ে আর বালির লরি যাতায়াত করবে না বলে পুলিশ আশ্বাস দিলে তাঁরা লরি ছেড়ে দেন । শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে অবৈধ খাদান বন্ধ রয়েছে । অসাধু ব্যক্তিরা ফের যাতে ওই অবৈধ খাদান চালু করতে না পারে তারজন্য শনিবারও সারাদিন গ্রামবাসীরা ততপরতা জারি রাখে । গ্রামবাসীরা হুঁশিয়ারি দিয়েছে ফের অবৈধ বালিখাদান চালু হলে তারা বৃহত্ত্বর আন্দলনে নামবেন । ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী এদিন আরও বলেন ,কোড়া গ্রাম সংলগ্ন মুইদিপুরেও একটি বালি খাদান রয়েছে ।সেই খাদানেও প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ টি লরিতে বালি লোড হচ্ছে ।ওইসব ওভারলোড বালি বোধাই লরি মুইদিপুর থেকে দামোদরের বাঁধের রাস্তা দিয়ে গিয়ে কানাড়িয়া সেতু পেরিয়ে হুগলীতে চলে যাচ্ছে । এরজন্য বর্ষার মরশুমে দামোদরের বাঁধও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । অথচ সেচ দপ্তর নীরব ভূমিকা পালন করে চলেছে ।
এই বিষয়ে জামালপুর ব্লকের বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার বলেন , “কোড়া এলাকায় মুণ্ডেশ্বরী নদীতে অবৈধ খাদান চালু করা হয়েছিল তা জানাছিল না।রাস্তা বাঁচানোর জন্য অবৈধ খাদান থেকে লোড হওয়া বালির লরি যাতায়াত বন্ধ করেদিয়ে কিছু ভুল করেননি ।
সবিস্তার খোঁজ নিয়ে দেখছি । গ্রামবাসীদের অভিযোগ সত্য হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে । বিষয়টি নিয়ে উচ্চ কর্তৃপক্ষেরও দৃষ্টি আকর্ষন করা হবে । ”অন্যদিকে লোয়ার দামোদর ইরিগেশন ডিভিশনের ( সিঙ্গুর - হুগলী )সাব ডিভিশনাল অফিসার দীনের ঠিকাদার বলেন , “বাঁধের রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বেআইনি । বর্ষার মরশুমে বাঁধের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে । এতকিছুর পরেরও যদি বাঁধের রাস্তা দিয়ে কেউ ভারী যানবাহন নিয়ে যায় তবে তা বেআইনি কাজ হচ্ছে ।এই যাতায়াত বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে । ”